নতুন এডিপির সামনে ২৬ চ্যালেঞ্জ
প্রকাশিত : ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ২৮ জুন ২০২৩ বুধবার ৪৯ বার পঠিত
প্রকল্প তৈরি থেকে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন সব স্তরেই সমস্যা। একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট নতুন করে বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি করেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাপক হারে কমে গেছে। এ অবস্থায় প্রায় ২৬ ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। শনিবার থেকে নতুন এডিপির কার্যক্রম শুরু হবে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এডিপির লক্ষ্য পূরণ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে। প্রকল্পের গতি বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনের নতুন কোনো উদ্যোগ নেই।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সবগুলো মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ব্যয়ের ভিত্তিতে এডিপির বাস্তবায়ন হিসাব করা হয়। দেখা যায়-সবাই সমানভাবে কাজ করতে পারে না। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না-কী উদ্যোগ আছে। তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পদ গুরুত্বপূর্ণ হলেও অপেক্ষাকৃত নিচের দিকের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান। তারা নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এজন্য সব সময় ওপরের দিকে তাদের তাকিয়ে থাকতে হয়। অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ করা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখনো রয়ে গেছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোয় নানা বিষয় যুক্ত থাকে। যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ নিতে হয়। তাদের অনুমোদন ছাড়া কিছুই করা যায় না। তাদের মধ্যেও তো আমলাতান্ত্রিকতা আছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এডিবির আকার বড় করে না দেখে মানসম্মত বাস্তবায়নে যেতে হবে। ব্যয় সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ সরকারি ব্যয় বাড়লেও এর প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। তাই মূল্যস্ফীতি কম রাখতে হলে সরকারি ব্যয়ও কম করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প বেশি না নিয়ে চলমানগুলোকে নতুন করে যাচাই-বাছাই করতে হবে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরও ক্যাটাগরিভিত্তিক অর্থছাড়ের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে অর্থবছরের শুরু থেকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। আলসেমিভাব কাটিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পে গতি আনা দরকার।
সম্প্রতি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়-প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যায়ে ৯টি চ্যালেঞ্জ সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না-কী উদ্যোগ আছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৩টি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে চারটি চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম ধাপের চ্যালেঞ্জগুলোর কয়েকটি হলো-উন্নয়ন প্রকল্পে নানা ফাঁকফোকর আর ত্রুটি রেখেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রাক্কলিত দর নির্ধারণেও বিস্তর গরমিল থেকে যায়। একই সঙ্গে ডিপিপি ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়।
এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৩টি চ্যালেঞ্জের কয়েকটি হলো-ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও টিপিপির (কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব) কার্যক্রম ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা। প্রকল্পের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। নিয়মিত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং স্টিয়ারিং কমিটির সভা না করা। কেনাকাটা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু ও শেষ করতে দেরি করা। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে দেরি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ঘাটতি প্রভৃতি।
সূত্র জানায়, নতুন এডিপিতে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ (৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা) দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প হিসাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সর্বোচ্চ বরাদ্দ (৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা) পেয়েছে। এডিপিতে এক হাজার ৩০৯টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১১৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮০টি এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই প্রকল্প ২২টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ৮৯টি।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৪৯ হাজার ১৬ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা ধরা হয়। তবে সম্প্রতি এডিপির আকার কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
kushtiatime24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।